Monday, 28 April 2025

ভারতকে পাকিস্তানের কড়া হুঁশিয়ারি, থামাতে পারবে না

 


জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁয়ে হামলার প্রেক্ষিতে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে সীমান্তে আবারও গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় এবং এতে যদি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তাহলে আমাদের কেউই থামাতে পারবে না। খবর এনডিটিভি, আলজাজিরা, জিও নিউজের।

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে টানটান উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তে সেনাদের মধ্যে আবারও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতের এ ঘটনা নিয়ে টানা তিন রাত ধরে কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটল। ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলির জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশের সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে দুদিনে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ২৭২ পাকিস্তানি ভারত ছেড়েছেন। পাকিস্তানিদের ভারত ছাড়ার সময়সীমার শেষ দিন রোববার আরও কয়েকশ পাকিস্তানি ভারত ছেড়ে গেছেন বলে পিটিআই জানিয়েছে। একই সময়ে পাঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ৬২৯ জন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তান থেকে নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন।

এনডিটিভি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পহেলগাঁয়ে ভয়াবহ হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে রয়েছে। পাকিস্তানি সেনা ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিতভাবেই নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। শনিবার রাতেও পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে ‘ছোট অস্ত্রের উসকানিমূলক গুলিবর্ষণ’র ঘটনা ঘটে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল রাতের মধ্যে পাকিস্তানের সেনা পোস্টগুলো তুতমারিগালি এবং রামপুর সেক্টরের বিপরীতে কোনো উসকানি ছাড়াই ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে। আমাদের সেনারা যথাযথভাবে এর জবাব দিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রোববার বলেছেন, পুরো পাকিস্তান আজ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় তাহলে আমরা পুলওয়ামার ঘটনায় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম ঠিক সেভাবে মোদি সরকারকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

পুরো পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে ঐক্যবদ্ধ আছে বলে দাবি করে খাজা আসিফ যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের যে কোনো সংঘাত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে উঠবে। এই বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আনা হয়েছে। তারা পহেলগাঁয়ের এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে পারে। ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘উত্তেজনা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে কেউই আমাদের থামাতে পারবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি উত্তেজনা বাড়ানোর পথ বেছে নেন, তাহলে আমরা তাকে পুরো পথে তাড়া করব।’

এদিকে, পরমাণু শক্তিধর দুদেশের মধ্যে যেন কোনো ধরনের সশস্ত্র সংঘাত শুরু না হয়, তা নিশ্চিত করতে দূতিয়ালি করছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। শনিবার তিনি ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলাপকাল শাহবাজ শরিফ বলেন, পানিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য। পাকিস্তান যে কোনো মূল্যে তার অধিকার রক্ষা করবে। শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পহেলগাঁয়ে হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পহেলগাঁয়ের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত।’

অপরদিকে, মোদির সঙ্গে আলাপকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পহেলগাঁয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর তীব্র নিন্দা জানান। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইরান স্পষ্টভাবে এ ধরনের অমানবিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়।’ সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর তিনি জোর দেন।

লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে হামলা : লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে হামলা চালিয়েছে কিছু ভারতীয়। রোববার তাদের হামলায় দূতাবাসের জানালার কাচ ভেঙে যায়। এছাড়া ভবনের সাদা দেওয়াল এবং হাইকমিশন ভবনের ফলকে গেরুয়া রং ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এর একদিন আগে দূতাবাসের বাইরে শত শত ভারতীয় বিক্ষোভ করেন। সে সময় সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করেছিল স্থানীয় পুলিশ। এদিকে লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের বাইরে পাকিস্তানের সমর্থনে পালটা সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশ থেকে ভারতের দোষারোপের কূটনীতির প্রতি নিন্দা জানানো হয়।

ভারতের দিকে তাক করা ১৩০ পারমাণবিক বোমা : চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসী ভারতে পরমাণু হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শনিবার এক অনুষ্ঠানে হানিফ আব্বাসী বলেন, ‘শুধু ভারতের জন্য ১৩০টি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র তাক করে রাখা হয়েছে।

ঘৌরি, শাহিন এবং গজনবির মতো অত্যাধুনিক মিসাইলও প্রস্তুত আছে।’ তিনি বলেন, তারা যদি সিন্ধু নদীর পানি বন্ধ করার চেষ্টা করে, তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা সামরিক সরঞ্জাম ও মিসাইল শুধু প্রদর্শনের জন্য রাখিনি। পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোথায় রাখা আছে তা কেউ জানে না, তবে এটুকু নিশ্চিত-এগুলো ভারতের দিকেই তাক করে রয়েছে।”

আরব সাগরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা : এদিকে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আরব সাগরে একাধিক অ্যান্টি-শিপ (জাহাজবিধ্বংসী) ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। রোববার নৌবাহিনী বলছে, এ সফলতা দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা ও যুদ্ধ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে জানায়, ‘দূরপাল্লার নির্ভুল হামলার সক্ষমতা যাচাই ও প্রদর্শনের অংশ হিসাবে প্ল্যাটফর্ম, সিস্টেম ও ক্রুদের প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে একাধিক সফল অ্যান্টি-শিপ মিসাইল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী দেশের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, বিশ্বাসযোগ্য ও ভবিষ্যৎমুখী।’

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিরসনে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে এবং বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেলবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান-দুই দেশের নেতাদেরই চেনেন। দেশ দুটির সীমান্ত অঞ্চলে যে ঐতিহাসিক সংঘাত চলে আসছে। তবে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি ট্রাম্প।

কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের তাণ্ডব : পহেলগাঁয়ে হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরজুড়ে অভিযান চালিয়ে কাশ্মীরিদের নির্বিচারে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের বাড়ি বুলডোজার ও আইইডি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

রোববার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যরা সন্দেহভাজনদের বাড়িঘর ভেঙে দিচ্ছে। সর্বশেষ আরও দুই ব্যক্তির বাড়িঘর ভেঙে দেয় তারা। বলা হচ্ছে, ওই দুই ব্যক্তি পহেলগাঁয়ে ভয়াবহ হামলার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহভাজন।

হামলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই সন্দেহভাজন বিদ্রোহীর পরিবারের সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাদের আত্মীয়স্বজন এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা।



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: